ঝালকাঠিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার বোনকে মামলার বাদী বানিয়ে ভোরের কাগজ প্রতিনিধি মন্নœান তাওহিদকে হয়রানীর অভিযোগ

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ

দৈনিক ভোরের কাগজ ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি আব্দুল মন্নান তাওহিদকে মারধর করে পকেটে থাকা ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার মামলায় গ্রেফতার হওয়া ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদার মনির হোসেন তাঁর বোনকে বাদী ও ভাগ্নেকে ভিকটিম সাজিয়ে মন্নান তৌহিদের নামে একটি মিথ্যা হত্যা চেস্টা মামলা করিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, গত ১২ ফেব্রæয়ারি শহরের পূর্ব চাদকাঠি বিআইপি সড়কে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশল অফিস থেকে ডেকে এনে পার্শবর্তী একটি দোকানের মধ্যে আটকে রেখে ঝালকাঠি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন ও তাঁর কয়েক সহযোগি দৈনিক ভোরের কাগজ প্রতিনিধি এবং ঠিকাদার আব্দুল মন্নান তাওহিদকে লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করে ও জোড়পূর্বক ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া মনির হোসেন একটি সাদা স্ট্যাম্পে জোড় পূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার চেস্টা করে। এ ঘটনায় আব্দুল মন্নান বাদী হয়ে ১৮ ফেব্রæয়ারি ঝালকাঠি থানায় মামলা দায়ের করে। এ ঘটনার পূর্বে গত ৮ ফেব্রয়ারি সকাল ১১ টায় মনির হোসেন তার দলবল নিয়ে পূর্ব চাদকাঠি গনপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ের মধ্যের রাস্তায় মন্নানকে আটকিয়ে বলে, সিভিল সার্জন অফিসের যে ৭০ লাখ টাকার যে টেন্ডার পেয়েছিস তা আমার নামে লিখি দিবি, অন্যথায় আমাকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিবি। আমাকে টাকা না দিয়ে ঝালকাঠির কোথাও গনপূর্ত বিভাগের কাজ করতে পারিব না। মনিরের কথার প্রতিবাদ করলে মন্নানকে মারধর করে শাসিয়ে ছেড়ে দেয় মনির ও তার সাপাঙ্গরা। এতদিন ভয়ে ঘটনা চেপে থাকলেও মনির হোসেন কারাগারে থাকাকালীন ওই ঘটনায় গত ২২ ফেব্রæয়ারি মনির হোসেনসহ ৫ জনের নামে দ্রæত বিচার আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করে মন্নান তাওহিদ।
এদিকে ১৯ ফেব্রæয়ারি সকালে মন্নানকে মারধর ও ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার মামলায় মনির হোসেনকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই গৌতম কুমার ঘোষ। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান মনিরকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালত থেকে মনির হোসেনের জামিন না হওয়ায় মনির হোসেনের গুটি কয়েক আত্মীয় স্বজন বিশেষ করে ভগ্নিপতি বাচ্চু মনিরের বোনের ছেলে (ভাগ্নে) সিয়াম (২২) কে নিজেরই মাথার চামরা কেটে আহত করে গত ২০ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ভাগ্নে হাসপাতালে ভর্তির ৫ দিন পর ২৫ ফেব্রয়ারি সাংবাদিক মন্নান তাওহিদের মামলায় মনির হোসেন জামিন পায়। জামিন পাওয়ার ঘন্টা দুয়েক পর মনির হোসেনের বোন অর্থাৎ সিয়ামের মা সালমা আক্তার বাদী হয়ে ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা চেস্টা মামলা দায়ের করে। আদালত মামলাটি নালিশী হিসেবে গ্রহণ করে ঝালকাঠি থানার ওসিকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলায় ১ নম্বর বিবাদী করা হয় ভোরের কাগজ প্রতিনিধি আব্দুল মন্নান তাওহিদসহ ৬ জনকে। বাকি বিবাদীদের মধ্যে তিনজনই আব্দুল মন্নানের দায়ের করা মামলার সাক্ষী। মামলায় সালমা বেগম দাবী করেন, গত ২০ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটের সময় মধ্যচাদকাঠি রুপনগর ব্রীজের পশ্চিম পাশের রাস্তা দিয়া তার ছেলে সিয়াম হেটে যাওয়ার সময় আব্দুল মন্নান সহ অপর আসামীরা দাও, ছ্যানা, চাপাতি, জিআই পাইপ নিয়া সিয়ামের ওপর আক্রমন করে এবং আব্দুল মন্নান খুন করার উদ্দেশ্যে সিয়ামের মাথা লক্ষ করিয়া কোপ দেয়। ২নং বিাবদী নজরুল ইসলাম সিয়ামের ডান পায়ে কোপ দেয়। অন্যান্য আসামীরা সিয়ামকে পিটিয়ে নিলা ফুলা জখম করে। মামলার কথিত ঘটনাস্থল রুপনগর ব্রীজ এলাকায় ২০/২৫ টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানদারদের মধ্যে ৩/৪ জনের সাথে কথা বললে, তাঁরা বলেন, এখানে প্রায়ই কিশোর গ্যাং এর একাধিক গ্রæপের মধ্যে মারামারি হয়। আমরা ওদিকে তেমন একটা খেয়াল করিনা। শুনেছি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এখানে কারা যেন নিজেরা নিজেদের মাথা চিড়ে রক্ত বের করে দৌড়া দৌড়ি করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
আব্দুল মন্নান তাওহিদ অভিযোগ করে বলেন, আমাকে মারধর করে ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে যে মামলা করেছি তা থেকে বাচার জন্য এবং আমাকে আপোষে বাধ্য করার জন্য ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী মনির হোসেন তাঁর আপন বোনকে বাদী এবং ভাগ্নেকে ভিকটিম সাজিয়ে আমাকে হয়রানী করার জন্য একটি মামলা করেছে। মামলায় ঘটনার যে তারিখ ও সময় দেখানো হয়েছে, সেই সময়ে আমি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় ঝালকাঠি ২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু মহোদয়ের একটি জনসভায় তাঁর সাথে ছিলাম। ঝালকাঠি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহেব ও সদর থানার ওসি সাহেবও ওই প্রোগ্রামে ছিল। মন্নান তাওহিদ আরও বলেন মনির হোসেনের ভগ্নিপতি একাধিক চাঁদাবাজি মামলার আসামী ভুয়া উপাধ্যক্ষ পরিচয়দানকারী রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু এই মিথ্যা মামলা দায়েরর প্রধান কারিগর। এদিকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ভর্তি ও ইনজুরি নোট রেজিস্টার পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে, মনির হোসেনের ভাগ্নে সিয়াম গত ২০ ফেব্রæয়ারি রাত ৮ টায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়্ তাঁর ভর্তি রেজিনং ৫৮৫/১৬। ডা. সুলতানা সোনিয়া সিয়ামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তির নির্দেশ দেন। তিনি ইনজুরি নোটে লিখেছেন, “ অস্কিপিটাল রিজিয়ন” (মাথার পেছনে ভোতা অস্ত্রের আঘাত) আঘাতের দৈর্ঘ্য .৫০ সেন্টিমিটার বাই .০২৫ সেন্টিমিটার । ঝালকাঠি আইনজবী সমিতির সিনিয়র সদস্য এডভোকেট মুনিরুল ইসলাম মহারাজ বলেন, ভোতা অস্ত্রের এত ছোট আঘাতে দÐবিধির ৩২৬ ধারায় হত্যা চেস্টা মামলা হওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু আদালত এফআইআর এর আদেশ দিয়েছে তাই থানায় এফআইআর হবে। পরে তদন্ত কর্মকর্তা মেডিকেল সার্টিফিকেটের ওপর ভিত্তি করে ফাইনাল রিপোর্ট বা ৩২৬ বাদ দিয়ে অন্য ধারায় অভিযোগপত্র দিতে পারবে। এদিকে মঙ্গলবার বিকালে ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. আবু হানিফ বলেন, আদালতের কোন আদেশ আমাদের হাতে এখন পৌছেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *