রুমন হোসেন জিলহজ্ব,
লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
বুড়িমারী-ঢাকা রুটে অবশেষে চালু হচ্ছে আন্তঃনগর ট্রেন ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হতে যাওয়ায় উচ্ছাস প্রকাশ করেছে এ অঞ্চলের মানুষ। তবে অন্য আন্তঃনগর ট্রেনের মতো আদিতমারী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে আদিতমারী স্টেশনে যাত্রাবিরতির দাবিতে স্থানীয়দের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ও তিনবিঘা করিডোর পরদির্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় তিনি বুড়িমারী থেকে সরাসরি রাজধানী ঢাকায় চলাচলের জন্য একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৮ সালের ১৬ জুন মাসে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক আসেন লালমনিরহাট স্টেশনে। সেসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। পরে ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন লালমনিরহাট স্টেশন পরিদর্শনে আসেন। সেসময় বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুত চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অবশেষে গত বছরের ১৯ নভেম্বর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ১৪টি কোচ লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছায়। এরপর ৬ ডিসেম্বর বিকেলে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস।
এরপর ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারিত ছিল গত বছরের ৩০ নভেম্বর। পরে সেটি পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয় ৬ ডিসেম্বর। এ দিনটিও পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয় ১৬ ডিসেম্বর। সেদিনও উদ্বোধন করা হয়নি ট্রেনটি। পরে তারিখ পুননির্ধারণ করা হয়েছিল নতুন বছরের ১ জানুয়ারি। এরপর ১৮ ফেরুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হলেও উদ্বোধন হয়নি ট্রেনটি। পরে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) নতুন করে উদ্বোধনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রেনটি চালু হলে বুড়িমারী থেকে ঢাকার যোগাযোগের চিত্র বদলে যাবে। এতে লালমনিরহাটসহ এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
শনিবার (৯ মার্চ) বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন শাখার উপ-পরিচালক (টিটি) মো. শওকত জামিল মোহসী স্বাক্ষরিত এক নির্দেশপত্রে ট্রেনটি উদ্বোধনের বিষযটি জানানো হয়।
বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮০৯) বুড়িমারী ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে সোমবার এবং বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮১০) এর সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার। ১৪ কোচের ট্রেনে মোট আসন থাকবে ৬৩৮/৬৫৩টি। ট্রেনের রেক বেজ ও ওয়াটারিং করা হবে লালমনিরহাটে এবং ক্লিনিং করা হবে বুড়িমারীতে।
বুড়িমারী এক্সপ্রেস যেসব স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে ৮০৯ নম্বর ট্রেনটি ঢাকা বিমানবন্দর, ঈশ্বরদী বাইপাস, নাটোর, সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া, গাইবান্ধা, কাউনিয়া, লালমনিরহাট, তুষভান্ডার, হাতিবান্ধা, বড়খাতা ও পাটগ্রাম স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে।
অন্যদিকে ৮১০ নম্বর ট্রেনটি পাটগ্রাম, বড়খাতা, হাতিবান্ধা, তুষভান্ডার, লালমনিরহাট, কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, সান্তাহার, নাটোর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে। এদিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ট্রেনটির যাত্রাবিরতি রাখা হয়নি।
ফলে এসব এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আদিতমারীতে ট্রেনটির যাত্রা বিরতির দাবীতে সোমবার সকাল ১১টায় বুড়িরবাজার স্মৃতিসৌধ এলাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আদিতমারী প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরহাদ আলম সুমন এর সভাপতিত্বে মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন আদিতমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম, তিস্তা বাঁচাও নদী বঁচাও আন্দোলনের নেতা সাবেক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন রংপুরী, ডিবিসি নিউজের রংপুর বিভাগীয় প্রধান মাজেদ মাসুদ, উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শামছুন্নাহার বেগম মিলি, আদিতমারী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুলতান হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাইদুল ইসলাম সরকার বাবু প্রমুখ।
বক্তাগণ আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদিতমারী ষ্টেশনে ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির যাত্রাবিরতির প্রজ্ঞাপন জারী করতে হুশিয়ারী দেন। অন্যথায় মঙ্গলবার আদিতমারীর রেল ষ্টেশনে অবরোধের ডাক দেন তারা। পরে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে রেলমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় কমার্শিয়াল ম্যানেজার (ডিসিএম) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১২ মার্চ ট্রেনটি চালু করা হবে। ইতিমধ্যে ট্রেনটির ট্রায়াল রানও শেষ করা হয়েছে। বুড়িমারী-ঢাকা রুট ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রেলওয়ে রুট।