মেহেরপুর কলেজমোড়-টার্মিনাল পর্যন্ত এইচবিবিকরণে অনিয়ম

মোঃ আব্দুল হামিদ (মেহেরপুর) প্রতিনিধিঃ

মেহেরপুর সরকারি কলেজ মোড় থেকে নতুন বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দে এইচবিবি নির্মাণ কাজ শেষ গোড়মিল দিয়ে।

কাজের শুরুতেই অনিয়ম নিয়ে মেহেরপুর প্রতিদিনসহ জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি। বরং যেনতেনভাবে কাজ শেষ করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই কাজের প্রকল্পই গ্রহণ করা হয়েছে লুটপাটের জন্য এ অভিযোগ স্থানীয়দের।

মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী সাব্বির ও ঠিকাদার আব্দুস সালাম বাঁধণের যোগসাজশে অনিয়ম করে এ প্রকল্প শেষ করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, মেহেরপুর সরকারি কলেজ মোড় থেকে চুয়াডাঙ্গা সড়কে দুই পাশে এক হাজার ৯৫০ মিটার এইচবিবি করণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ঠিকাদারের দায়িত্ব পেয়েছেন মের্সাস আমিনুলহক এন্টার প্রাইজ। তবে কাজটি করছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম বাঁধন। প্রকল্পে ১২ লাখ ১২ হাজার ৯৭৫ টাকা মাটি, ১২ লাখ ৪ হাজার ৩৬৫ টাকা বালি এবং এক নম্বর ইট বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ১৬৮ টাকা। সবমিলিয়ে ৯৭ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬৫ টাকা।

প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সড়কে ডান পাশের ৯৫০ মিটার এইববিবি করণের কাজ প্রায় শেষের পথে। গড়ে ৮ফুট চওড়া হওয়ার কথা থাকলে পুরো প্রকল্পের অধিকাংশ স্থানে ৪ থেকে ৬ ফুট চওড়া পাওয়া গেছে। ১২ লাখ টাকার মাটি ধরা হলেও পুরো কাজ শেষ হলেও কাজ প্রায় শেষ হলেও সেখানে এক টাকারও মাটি দেওয়া হয়নি। রোলিং করে ভালো ভাবে সাব গ্রেড করা হয়নি। এমনকি চাহিদামত পানি দিয়ে কিউরিংও করা হয়নি, ফলে যেটুক কাজ হয়েছে অধিকাংশ স্থান দেবে গিয়েছে। দরপত্রে এক নম্বর ইট ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও নিম্মমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে।

১৬ ইঞ্চি গভির করে খনন করে ৬ ইঞ্চি বালি দিয়ে ভরাট করার কথা দরপত্রে থাকলেও অধিকাংশ স্থানে কম গভির করে খনন করা হয়েছে। কলেজ মোড় থেকে বামদিকের কাজ শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগে। সেখানে দেখা গিয়েছে প্রায় ২০০ ফুট কোন কাজ করা হয়নি।

সড়কে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিক মিলন মিয়া তখন জানিয়েছিলেন, “এখানে মাটি কেটে যা পাওয়া গেছে সেই মাটি দিয়েই পুরণ করা হয়েছে। নতুন করে কোন মাটি দেওয়া হয়নি”।

মেহেরপুর পশু হাট এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, রাস্তার কাজ একেবারেই ভালো হয়নি। আগের রাস্তায় ভালো ছিল। এখন যে রাস্তা হয়েছে সেটা দুদিনে নষ্ট হয়ে যাবে। ইট বিছানোর পর কিউরিং করা হয়নি। মাত্র এক ট্রাক বালি এনে সমস্ত রাস্তায় ছিটানো হয়েছে। আপনারা গরু হাটের সামনে গেলে দেখতে পাবেন রাস্তায় বিছানো সকল ইট দেবে গেছে”।

এছাড়াও স্থানীয় ফার্নিচার ব্যবসায়ী হৃদয়, জাহিদ ও কাজিম প্রতিবেদকের কাছে এসে রাস্তার কাজ নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রাসেল হোসেন অভিযোগ করে বলেছিলেন, “আমার বাড়ি এই রাস্তার পাশেই। কাজ চলার সময় আমি কয়েকবার বাঁধা দিয়েছি, সঠিক ভাবে কাজ করার জন্য। এখন পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে কেউ প্রতিবাদ করতে চায় না। সবাই ভাবে সরকারি টাকা যা হচ্ছে হোক। এই রাস্তা কোন জায়গায় আট ফিট, কোন জায়গায় ছয় ফিট আবার কোথাও বা তিন ফিট খোড়া হয়েছে। রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার আগেই রাস্তা দেবে গেছে। সরকার উন্নয়নের জন্য টাকা দিচ্ছে কিন্তু এভাবেই অপচয় করা হচ্ছে”।

তবে ঠিকাদার আব্দুস সালাম বাঁধনের সাথে গতকাল যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে, এর আগে তাঁকে এ কাজের ব্যপারে এসএমএস দেওয়া হলে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আমার কাজে যদি কোন ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে সেই দায় আমার, আমি কাজটি সিডিউল মোতাবেক সম্পূর্ণ করে বিল সাবমিট করব”।

প্রকল্পটির দায়িত্ব রয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, “কাজ এখনো শেষ হয়নি। সিডিউল মোতাবেক কাজ দেখে নেওয়া হচ্ছে। যেখানে দেবে যাচ্ছে সেখানে পুণরায় ঠিক করিয়ে নেওয়া হবে”। তবে গতকাল তিনি ফোন ধরেননি। এবং একই ভাবে অনিয়মের মধ্যে দিয়ে কাজ শেষ হলেও তাকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, আমি অবশ্যই ওই কাজ দেখবো। কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, আপনাদের (সাংবাদিক) সাথে নিয়ে মেহেরপুরের উন্নয়ন কাজগুলো ভালোভাবে করতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *