মোঃ কামরুল হাসান সৈকত,নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে মেসেজের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া।
সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন যে সাজন সাহা ২০১৯ সাল থেকেই সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়াকে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ দিতেন। প্রথমে ভালো মনে করে সেগুলোকে আমলে নেয়নি ছোঁয়া। এভাবে মেসেজ চলতে থাকে ২০২১ সাল পর্যন্ত। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের ২৬ তারিখে রাত ১টা বেজে ৩৩ মিনিটে সাজন সাহা ছোঁয়াকে মেসেজ দেন এবং লিখেন, “আসেন চা খাই।” উত্তরে ছোঁয়া লিখেন, “এখন তো পসিবল না স্যার অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।” পরে শিক্ষক তার কথা ঘুড়িয়ে বলেন “না এখন না”। শুধু ছোঁয়াকেই নয় উনার বিবাহিত স্ত্রীর অন্তঃসত্তার কারণে বাবার বাসায় থাকার সুযোগে অন্য শিক্ষার্থীদেরকে মেসেজ দিতেন বলে অভিযোগ করেছেন সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া।
এছাড়াও ম্যাথ করানোর বাহানা দিয়ে একাধিকবার রুমে যাওয়ার জন্য বলতেন শিক্ষক। আর ভয়ে রুমে না যাওয়ার জন্য রাজি না হওয়ায় ছোঁয়ার প্রতি রাগান্বিত হয় এবং তার পাওয়ার দেখানো শুরু করে বলে জানান ছোঁয়া।
শুধু তাই নয়, নাম্বার টেম্পারিং-এর অভিযোগ তুলে ছোঁয়া বলেন, “প্রতিটা সেমিস্টারে উনার (সাজন সাহা) যত কোর্স ছিলো উনি (সাজন সাহা) সেগুলোতে আমাকে যতটুকু সম্ভব কম মার্কস দিয়েছেন এবং উপস্থিতি নিয়ে জরিমানা করেছেন আমার মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখানো ও দরখাস্ত দেওয়ার পরও।”
তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের ৯ই জুলাই যখন ছোঁয়া প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে যায় এবং লাইফ সাপোর্ট থাকাকালীন সময়ে অনুপস্থিত থাকে। পরে অসুস্থতার মেডিকেল ডকুমেন্ট দেখানো হলেও তাকে জরিমানা করা হয়েছে এবং এডমিট কার্ড নিয়ে তাকে অসুস্থ শরীরে হেনস্তার স্বীকার হতে হয়। ২০২১ সাল থেকে তার একমাত্র বোনের স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। একারণে বাসায় তাকে সময় দিতে হয়েছে। যেটা সে বিভাগের সব শিক্ষকদেরকে অবগত করেছিল।
হয়রানির অভিযোগ তুলে সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া বলেন, ” লাস্ট সেমিস্টারে আমি ঢাকায় ইন্টার্নশীপে ঢুকি প্রাইম ব্যাংকে। এই ৩মাস আমি সাজন সাহা স্যারকে বিভিন্নভাবে রিচ করার চেষ্টা করেছি উনি আমার ফোন ধরেন নি। ডিপার্টমেন্টে গিয়ে আমি ৫দিন সারাদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম সাজন সাহা স্যার আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে সবার সামনে বের করে দেন। এছাড়া স্যার আমার রিপোর্টের টপিক ৪ বার চেঞ্জ করেছেন এবং পরবর্তীতে যখন রিপোর্ট দেখাতে গিয়েছি সাজন সাহা স্যার অস্বীকার করেছেন যে এই টপিক বলে দেনই নি।”
রিপোর্টের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সাজন সাহা বারবার ছোঁয়াকে ঘুরাতেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানার জন্য বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার কাছে বারবার ফোন দেওয়ার পরও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এই বিষয়ে বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান রেজওয়ান আহমেদ শুভ্রের সাথে কথা বললে তিনি জানান, “আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি। অন্যায়কারীকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দবিগুলো হলো ১. অভিযুক্ত শিক্ষকে চাকুরীচুত্য, ২. অপরাধের সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনা ৩. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ৪. অনতিবিলম্বে পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ৫. ভবিষ্যতে এঘটনার কোন বিরুপ প্রভাবের না পাওয়ার নিশ্চয়তা নিশ্চিত এবং ৬. আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন।
পরবর্তীতে দাবিগুলো লিখে আন্দোলনকারীরা লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট।