এস,আর শরিফুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট।
সামান্য এপিএস থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের এপিএস মিজান। তিস্তা নদীর পাশে অবৈধভাবে তৈরি করেছেন বালু মহল। রয়েছে নামে বেনামে ব্যাংক ব্যালেন্স। মালিক হয়েছেন শত একর জমির। বিদেশেও পাচার করেছেন বিশাল অঙ্কের টাকা। আমেরিকায় করেছেন বিশাল আলী শান বাড়ি।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বাসিন্দা কাঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান। মিজান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির সুবাদে হয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রীর এপিএস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশ থেকে পালিয়ে এখন স্ত্রী তমা ও তার সন্তানসহ আমেরিকাতে আছেন মিজান। লালমনিরহাটের কাকিনার বানিনগরে তার শ্বশুরবাড়ি৷ মিজানের স্ত্রী তমা এলাকায় ফার্স্ট লেডি বলে পরিচিত। কালীগঞ্জের কাকিনা মহিপুর এলাকায় মিজানের স্ত্রী তমার গাড়িতে পাচার করা হতো মদ, ফেনসিডিলসহ মাদক। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিপুল মাদকসহ একটি প্রাইভেট কার আটক করে ডিবি পুলিশ।
প্রাইভেট কারের চালক এর কাছ থেকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা যানতে পারেন যে , এপিএস মিজানের ক্যাশিয়ার বলে পরিচিত রেল কর্মচারী জাকির হোসেন। এ ছাড়াও সোনা পাচারের ব্যবসা ব্যবসা রয়েছে তার। এই সোনা পাচারে তার পার্টনার হিসেবে ছিলেন মহিষখোচা কলেজের শিক্ষক সেফাউল। মিজান প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও জড়িত ছিল বলে অভিযোগ আছে। তার সহযোগী ছিলেন প্রশ্ন চক্রের হোতা এমডি মিজান।
অভিযোগ রয়েছে, মিজান অনামিকা ট্রেডার্স এর নামে মহিষখোচা তিস্তা বাঁধ নির্মাণে ১০ কোটি টাকার কাজ জোর করে টেন্ডারে নিয়ে নিম্নমানের কাজ করেন। যা ৬ মাসেই লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে।
সরেজমিন আদিতমারীর মহিষখোচা গ্রামে গেলে গ্রামবাসীরা জানান, মিজান শত শত কোটি টাকার মালিক। তার বাবার জমি নদীতে ভেঙে যায়। তাদের তেমন কিছু ছিল না। এখন অঢেল জমির মালিক তার পরিবারের লোকজন। তারা জিরো থেকে হিরো হয়েছেন।
জানা গেছে, সমাজকল্যাণমন্ত্রীর এপিএস থাকার সময়ে আদিতমারীর মহিষখোচার কচুমুড়া এলাকায় ২০ বিঘা, বারঘরিয়া বালুঘাটে ১৫ বিঘা, গোবরধন চরে ৫০ বিঘা জমি কেনেন তিনি। মহিষখোচা বাজারে কোটি টাকার ওপরে জমি কেনেন। মন্ত্রীর এপিএস হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মারধর করা হতো। তিস্তা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে ১৫ বছরে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মিজান। এ ছারাও রয়েছে এপিএস মিজানের নামে বেনামে শত শত বিঘা জমি।
অপরদিকে মিজানের ছোটভাই এরশাদুল হক চাকরি করেন হাতিবান্ধায় ভূমি অফিসের পিয়ন পদে। ২০ তম গ্রেডে চাকরি করে ১০ হাজার টাকা তার বেতন। বড়ভাই মন্ত্রীর এপিএস হওয়ায় চাকরি না করেও তুলতেন বেতন। পিয়ন থেকে তিনিও এখন কোটি টাকার মালিক। মহিষখোচা বাজারে সোনালী ব্যাংকের সামনে বড় বড় গোডাউনে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার ভুট্টা।
এসব বিষয়ে মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রাম জেলার দুদক উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ হয়েছে মিজানের নামে। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।