নূরুন নবী রাজশাহী প্রতিনিধি :
নিজ বাড়িতে থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী নগরীর গৌরহাঙ্গা এলাকার রাজিব আলীকে। এর পর পদ্মার চরে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে ওই যুবকের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপনের নামে আদায় করা হয় ৫ লাখ টাকা। তবে তাকে না ছেড়ে দেয়া হয় মাদক মামলা। ওই মামলায় সেই যুবককে কারাগারে থাকতে হয় প্রায় দেড় বছর। এমন অভিযোগ উঠেছে বহিস্কৃত পুলিশের এসআই মাহাবুব হাসানের (বিপি# ৮৭১৪১৬৮২৭৯) বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের দুপুরের সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাহাবুব হাসানের বিরুদ্ধে গত ২১ আগস্ট মামলা করেন ওই যুবকের বাবা মাসুদ রানা সরকার।
মামলায় দাবি করা হয়, এসআই মাহাবুব হাসান নিজেকে পুলিশের পাশিপাশি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান। এদিকে মাহাবুব হাসানের বিরুদ্ধে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে র্দুব্যবহার করতেন। এমনকি ২০২২ সালে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে আরএমপির গোয়েন্দা শাখা থেকে সকল সদস্যকে একযোগে বদলি করা হলেও মাহাবুব হাসান তার নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেননি। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রাজশাহী জেলার বিভিন্ন মামদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিনি উৎকোচ আদায় করে নগরীতে একাধিক বাড়ি-গাড়ি ও জমি গড়েছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাহাবুব হাসান।
রাজিব আলীর বাবা মাসুদ রানা সরকারের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর আরএমপির গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন এসআই মাহবুব হাসান অস্ত্র নিয়ে সাদা পোশাকে তার বাড়ি যান এবং তার ছেলে রাজিব আলীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে নগরীর শিমলা পার্কে তুলে নিয়ে যায়। এরপর মাহবুব হাসান তার সথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এবং ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। তা না হলে তার ছেলেকে পদ্মার চরে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন।
ছেলেকে উদ্ধারে মাসুদ রানা ওই স্থানে গিয়ে মাহবুব হাসানকে ৫ লাখ টাকা দেন। তবে মাসুদ রানা চলে যাওয়ার পর মাহবুব হাসান তার ছেলেকে না ছেড়ে মাদক আইনে মথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। ওই মামলা তার ছেলেকে ১৬ মাস কারাগারে কাটাতে হয়। পরবর্তিতে মাহাবুব হাসানের সাথে দেখা করে অর্থ ফেরত চাইলে মাসুদ রানাকে হত্যার হুমকি প্রদান করেন। বোয়ালিয়া থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, মামলা হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজিব আলী বলেন, মাহাবুব হাসান ডিবিতে কর্মরত অবস্থায় তার মতো অনেককেই এভাবে ফাঁসিয়ে বিপুল অর্থ আদায় করেছেন। এসব অর্থ দিয়ে তিনি নগরী ও বাইরে বাড়ি, গাড়ি ও জমি কিনেছেন। তার কারণে আমি চাকরি হারিয়েছি। আমি এর বিচার চাই।
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে মাহাবুব হাসান জানান, তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। রাজিব আলী ওই মামলার ঘটনায় তদন্ত হয়েছে। ঘটনার সতত্যা পেয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা। মামলা চলমান। মাহাবুব হাসান আরও বলেন, তিনি ২০২২ সাল থেকে তার কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেননি। সম্পদের যে কথা বলা হচ্ছে তার এমন কোন সম্পদ নাই।