বাংলাদেশে ২ এবং ৫ টাকার নোটের করুণ দশা: ভাঁজ, ছেঁড়া, আর টেপে মোড়া

মো: মাহবুবুল আলম (সুমন)
প্রভাষক, পলাশীহাটা স্কুল এন্ড কলেজ

বাংলাদেশে ২ এবং ৫ টাকার নোটের অবস্থা যেন এক হাস্যকর করুণ কাহিনি। প্রতিদিনকার কেনাকাটায় এই নোটগুলো আমাদের সবার হাতেই আসে, কিন্তু এদের যা দশা, তাতে না পারা যায় নিতে, না পারা যায় দিতে। ছেঁড়া, ময়লা, ভাঁজ হওয়া, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেলোটেপ দিয়ে মোড়া—এমনই হলো ২ আর ৫ টাকার নোটের বর্তমান চেহারা।

বাজারে কিংবা রাস্তায় হাতবদল হতে হতে নোটগুলো এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে যে, অনেক জায়গায় এই নোটগুলো হাতে ধরলে মনে হয় যেন কোনো বাতিল কাগজের টুকরো। কখনো কখনো নোটের এমন অবস্থা হয় যে, এর সঠিক মূল্যও আর বোঝা যায় না। টেপের এমন বহর যে, মনে হয় যেন নোটের সারা শরীর ঢেকে দিয়েছে। কোনো কোনো নোটের লেখা অর্ধেকই মুছে গেছে। তার ওপর কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, টাকার সংখ্যা বোঝাই যাচ্ছে না।

আর এ নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। দোকানদার, রিকশাচালক, কিংবা বাসের হেল্পার—কেউই ছেঁড়া, ময়লা, কিংবা টেপ লাগানো ২ টাকার নোট নিতে চায় না। অনেক সময় তারা সরাসরি বলেই বসে, “ভাই, এই নোট রাখেন। ভালো নোট দেন।” এ যেন এক প্রকার অপমান। অথচ বাজারে ভালো নোট পাওয়াটাই এখন কঠিন। যখন নোট নিতেই চায় না, তখন ভাঙতি পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে। খুচরো টাকার এই সমস্যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি করছে।

এর ফলে অনেক সময় মানুষ বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দেয় কিংবা খুচরা না পেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এমনকি ছোটখাটো কেনাকাটায়ও দেখা দেয় অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা। দোকানদার কিংবা ক্রেতা কেউই চায় না এই ছেঁড়া নোট। অনেক সময় অনেকে ২ টাকার নোট তো নিতে একেবারেই রাজি হয় না। তারা বলে, “এটা তো বাতিল প্রায়! এটা রাখবো কীভাবে?”

এ পরিস্থিতির জন্য একদিকে যেমন নোটগুলোর নিম্নমানের কাগজ দায়ী, অন্যদিকে তেমনই দায়ী যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। এ ছাড়া নিয়মিত নতুন নোটের সরবরাহও পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে পুরোনো নোটগুলোকে তুলে নেওয়ার ব্যবস্থাও নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া দরকার। নোটগুলোর কাগজের মান উন্নত করা, নোট সরবরাহ বৃদ্ধি করা, এবং ছেঁড়া নোটের বদলে নতুন নোট প্রচলন করা জরুরি।

এছাড়া, প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যাতে সাধারণ মানুষ নোটগুলো যত্ন সহকারে ব্যবহার করে। ২ এবং ৫ টাকার নোট হয়তো ছোট, কিন্তু এদের সম্মান ও গৌরব ধরে রাখাও আমাদের দায়িত্ব। কেননা, এসব ছোট ছোট নোটই আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই নোটের সম্মান রাখা উচিত, ঠিক যেমনটি রাখা উচিত আমাদের নিজেদের।

আসুন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি যেন এই ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নোটগুলো আবারও নতুন করে ফিরে পায় তাদের সঠিক মূল্য এবং সম্মান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *