দিনাজপুরের বিরামপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক শিশু রোগীকে সঠিক সেবা না দিয়ে উল্টো শিশুর বাবা-মা’র সাথে অশোভন আচরণ ও দূর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোঃ সাইদুল ইসলাম বাবু নামের ভুক্তভোগী শিশুর বাবা বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। অভিযুক্ত নার্স নূরজাহান বেগম বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে কর্মরত রয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১১ সেপ্টেম্বর রাতে পৌর এলাকার বেগমপুর গ্রামের মোছাঃ নাফিসা ইসলাম (৬) এর পেটে তীব্র ব্যাথা শুরু হলে তার বাবা-মা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সিনিয়র স্টাফ নার্স নূরজাহান বেগম শিশু নাফিসা ইসলামের হাতে অমানবিক ভাবে ইনজেকশন পুশ করার কারণে সে উক্ত নার্সকে দেখলেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
পরের দিনও ঐ নার্স ইনজেকশন দিতে এলে, শিশুর মা কায়মুন্নাহার মেয়ের হাতে ধিরস্থির ভাবে ইনজেকশন পুশ করতে অনুরোধ করেন। এসময় নার্স নূরজাহান বেগম প্রচন্ড ভাবে রাগান্বিত হয়ে শিশুর মাকে অশালীন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে অসহনীয় ভাবে ক্যানোলার মধ্যে ইনজেকশন পুশ করার কারণে শিশু নাফিসা ইসলামের হাতে লাগানো ক্যানোলা খুলে যায়, তারপরেও সেই নার্স ইনজেকশন পুশ করতে থাকে।
নার্সের পুশকৃত ইনজেকশন শিশু নাফিসার হাতের ভ্যানে না গিয়ে মাংসের মধ্যে ঢুকে যায় এবং ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বের হয়ে হাত অনেকটা ফুলে যায়। পরে ঘটনাটি মুঠোফোনে শিশুর মা শিশুর বাবাকে জানালে, শিশুর বাবা সেখানে গিয়ে অভিযুক্ত নার্সের কাছে এমন ঘটনার কারণ জানতে চাইলে সে নার্স আরো রাগান্বিত হয়ে শিশুর বাবার সাথেও দূর্ব্যবহার করেন এবং রোগীকে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে বলেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নার্স নুরজাহান বেগম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সেদিন এরকম কোনো অসদাচরণের ঘটনা ঘটেনি এবং শিশুটিকে স্বাভাবিক ভাবেই ইনজেকশন পুশ করেছেন বলে জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম রসূল রাখি জানান, সিনিয়র স্টাফ নার্স নূরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে একজন শিশু রোগী ও তার বাবা-মা’র সাথে অসদাচরণের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও গত ৯ সেপ্টেম্বর এ হাসপাতালে অনামিকা নামে এক গর্ভবতী মা সন্তান প্রসবের পরে কর্তব্যরত মিডওয়াইফ মোছাঃ কহিনুর বেগমের ভুল সেবার কারণে মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে রোগীর স্বজনেরা দিনাজপুর সদরে রোগীকে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা করে সারিয়ে তুলেন বলে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনেরা জানিয়েছেন। এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে ঐদিন উপস্থিত নার্সদের কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় এবং ঐদিন রাতেই কর্তব্যরত চিকিৎসক উভয় পক্ষ
কে নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। কিন্তু নিজেদের ভুল না শুধরিয়ে পরের দিন নার্সেরাই উল্টো সেই রোগীর স্বজনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। প্রায়শই বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু নার্স ভর্তিকৃত রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে দূর্ব্যবহার করে থাকেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। আবার কিছু ভালো নার্সও রয়েছেন যারা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে থাকেন বলেও জানা গেছে। বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে সকল নার্স রোগী ও রোগীর স্বজনের সাথে অপেশাদার আচরণ ও দূর্ব্যবহার করে থাকেন, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করে বদলী করা সহ বিভাগীয় শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনেরা।