গল্পকথায় বইমেলাঃ

আব্দুল লতিফ সরকার,স্টাফ রির্পোটার

সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ব্যতিক্রমী এক বইমেলার আয়োজন করেছে লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী গল্পকথা পরিবার।

গতকাল শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল ১১টায় লালমনিরহাট শহরের ভকেশনাল রোডের মৃধা বাড়িতে ১০ দিন ব্যাপী এ বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা।

আগামী বই ও ঐতিহ্যকে লালন করতে এক আড্ডার ব্যবস্থা করেছে গল্পকথা পরিবার। সেখানে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে মৃধাবাড়ী। সেখানে আগন্তুকরা ইট পাথরের শহরের মাঝে ফিরে পান এক শান্ত পরিবেশ। হারাতে বসা গ্রামীণ সব আসবাব পত্রে সাজানো এই আড্ডা স্থলে প্রবেশ করতে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না।

আড্ডা দিতে আসা অতিথিদের খাবারের জন্য একটি রেস্টুরেন্টও রয়েছে এখানে।

স্থনীয় নারী উদ্যোক্তারা রান্না করা খাবার এখানে প্রদর্শন ও বিক্রি করতে পারেন। নারীদের কাজকে উৎসাহিত করতে ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে এ সুযোগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এ রেস্টুরেন্টে পার্ট টাইম কাজের সুযোগও রয়েছে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা প্রতি ঘণ্টা হিসাবে কাজ করে একটা ভালো সম্মানী পান এখানে।

টং ও কুঁড়েঘর, বাঁশ বেতের বেড়ায় তৈরি পুরো স্থাপনা। এখানে আপ্যায়ন করা হয় মাটির পাত্রে। রয়েছে আঞ্চলিক ভাষা চর্চার ব্যবস্থা ও লাইব্রেরি থেকে নিয়ে পছন্দের বই পড়ার সুযোগ। আরও আছে কবিতা আবৃতি ও আঞ্চলিক গান গজল পরিবেশনার ব্যবস্থাও। এসব পরিবেশনে কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। ইচ্ছে হলেই ডায়াসের সামনে গিয়ে যে কেউ গাইতে পারবেন পছন্দের গান। তবে তা হতে হতে পরিচ্ছন্ন আঞ্চলিকতা ও ঐতিহ্যকে ঠিক রেখে।

স্থানীয় আঞ্চলিক ও বরেণ্য কবি সাহিত্যিকদের পরিচিত করতে তাদের বই আগামী প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে ১০ দিন ব্যাপী বইমেলার আয়োজন করেছে গল্পকথা পরিবার। আর এ বইমেলা উদ্বোধন করতেও ব্যতিক্রমী আয়োজন তাদের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনো অতিথি নেই। পাঠক দর্শনার্থী আর মেলায় আগন্তুকরাই উদ্বোধক।

প্রায় তিন হাজার বই স্থান পেয়েছে মেলায়। উদ্বোধনী দিনে দর্শনার্থী কম থাকলেও আগামীতে বাড়বে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। এ আয়োজন শুধু ১০ দিনেরই নয়। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে থাকবে আরও মেলার আয়োজন।

স্থানীয় কবি সাহিত্যিক মমিনুল আলম রাসেল বলেন, বই পড়ে বা কিনে কেউ বিপথে যায়নি। গ্রামীণ পরিবেশে আড্ডার সঙ্গে বই পড়ার সুযোগ থাকায় সপরিবারে বইমেলায় মানুষ আসবে এমনটাই আশা তার।

গল্পকথা পরিবারের মূল আয়োজক সংস্কৃতিকর্মী মুনিম হোসেন প্রতীক বলেন, আগামী প্রজন্মকে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করতে গল্পকথা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জার্মান প্রবাসী বন্ধু মিম হকের পৈত্রিক বাড়িটি নিয়ে গল্পকথা গড়ে তোলা হয়। হারাতে বসা গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন তথা আগামী প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে এটি এভাবে তৈরি করা হয়েছে। এখানে এসে আমাদের ছেলে মেয়েরা দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *