উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইল জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ লাইনস-নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মেমোরিয়াল ডে- ২০২৪ পালিত।
কর্তব্যের তরে, করে গেল যারা, আত্মবলিদান-প্রতিক্ষণে স্মরি, রাখিব ধরি, তোমাদের সম্মান”
বাংলাদেশ পুলিশে কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে নড়াইল জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ লাইনস-এ আয়েজিত নান কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে শনিবার (৯ মার্চ) পুলিশ মেমোরিয়াল ডে- ২০২৪ পালিত হয়েছে।
মোহাঃ মেহেদী হাসান, পুলিশ সুপার’র সভাপতিত্বে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা মহোদয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস। প্রথমে শহিদ পুলিশ সদস্যদের মুর্দা সালামি দেওয়া হয় এবং তাদের আত্মার স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ সকল শহিদ পুলিশ সদস্যদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণসহ পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরবর্তীতে শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) তারেক আল মেহেদীর সঞ্চালনায় আলোচনা ও স্মৃতিচারণ সভা শুরু হয় । প্রথমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন। পরে কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ স্মৃতিচারণ করেন এবং আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।বিশেষ অতিথি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদানের কথা উল্লেখ করেন। নড়াইল জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ প্রথম রাজারবাগ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। করোনা কালীন সময়ে পুলিশ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং জীবন উৎসর্গ করেছেন।” তিনি জেলা প্রশাসনের সকল কাজে পুলিশের সহযোগিতা পান বলে পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৪ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় হুইপ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বলেন, দেশের যেকোনো সংকটে সর্বপ্রথম পুলিশই ঝাঁপিয়ে পড়েন। গত বছর ১৩৪ জন পুলিশ সদস্য শহিদ হয়েছিলেন যার মধ্যে নড়াইলের দুইজন ছিলেন। হুইপ নড়াইল জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নড়াইলের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক রাখার জন্য জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি শহিদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের যেকোন বিপদে আপদে জেলা পুলিশের পাশাপাশি আমি আপনাদের পাশে থাকবো।”
পুলিশ সুপার মোহাঃ মেহেদী হাসান বলেন, পুলিশ সদস্যরা দেশ ও জাতির সেবায় একনিষ্ঠ ও নিঃস্বার্থভাবে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে। একনিষ্ঠ, বিশ্বস্ত, স্বদেশপ্রেমী ও দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী এ সকল পুলিশ সদস্যের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ সময় তিনি উপস্থিত সকল পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদেরকে যেকোন প্রয়োজনে কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সকল পুলিশ সদস্যের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন “১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বাংলাদেশ পুলিশ।এখানে প্রায় সাতশত পুলিশ সদস্য শহিদ হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য ছিল মাত্র ১৪ হাজার। এই সীমিত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন প্রায় ১২০০ জন”। পুলিশ সুপার মহোদয় স্মৃতিচারণ করে বলেন “মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্রাগার খুলে দিয়েছিলেন। এটা জানতে পেরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওসিকে থানা থেকে টেনে হিঁচড়ে জিপের সাথে বেঁধে সারা শহর ঘুরিয়েছিল। উক্ত অফিসার ইনচার্জের মাথার ঘিলু ফোঁটা ফোঁটা করে রাস্তায় পড়েছিল। এ ধরনের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশের অসংখ্য সদস্য। কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ৪২ পুলিশ সদস্যের পরিবারবর্গের নিকট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী প্রধান অতিথি মাননীয় হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা প্রদান করেন।