নোয়াখালীতে ধাপে ধাপে বাড়ছে বন্যার পানি, ৫ জনের মৃত্যু

📰মোহাম্মদ আবু নাছের,  নোয়াখালী :

জেলা অধিকাংশ স্হানে আবহাওয়া কিছুটা ভালো থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত নোয়াখালীতে পানি কিছুটা কমে আসে। তবে শনিবার রাত ১০টার পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে আবারও কোথাও কোথাও এক থেকে দুই ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বন্যা ও জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত নোয়াখালী। থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও বাড়ছে পানি। জেলায় ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। বন্যার কারণে জেলায় রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

আবহাওয়া কিছুটা ভালো থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত নোয়াখালীতে পানি কিছুটা কমে আসে। তবে শনিবার রাত ১০টার পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে আবারও কোথাও কোথাও এক থেকে দুই ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টিপাত আরও দুদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা আবহাওয়া অফিস।

রোববার (২৫ আগস্ট ) সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বন্যার কারণে জেলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- সেনবাগ উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামের শিশু জিলহাজুল ইসলাম ও কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট পশ্চিম পাড়ার দুই বছর বয়সী আবদুর রহমান এবং সদর উপজেলার কালাদরপ ইউনিয়নের পূর্ব শুল্লকিয়া গ্রামের আড়াই বছরের রিয়ান। শিশু তিনটি বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়। এছাড়া বন্যার পানির কারণে ঘরের ভেতর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান সেনবাগ উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের কাকন কর্মকার ও বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ।

এদিকে ডাকাতিয়া নদী হয়ে ফেনীর বন্যার পানি সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় প্রবাহিত হওয়ায় পানির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির পাশাপাশি জনদুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার আট উপজেলার ৮৭টি ইউনিয়ন ও সাতটি পৌরসভার ২০ লাখ ৩৬ হাজার সাতশ’ মানুষ পানিইন্দ রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৬ জন বানভাসি ঠাঁই নিয়েছেন।

পানিবন্দি মানুষের জন্য নগদ ৪৫ লাখ টাকা ও ১৮শ’ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় ৮৮টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় আবার‌ো বৃষ্টি বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। লঘুচাপের কারণে আরও দুদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া নদীবন্দরকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হাসান খান বলেন, ‘বন্যার কারণে এ পর্যন্ত জেলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনটি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। অপর দুজন ঘরে বন্যার পানি ঢুকে বিদ্যুতের শর্টসার্কিটে মারা গেছেন।

নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সি আমির ফয়সাল বলেন, ‘বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল ও নোয়াখালী সদরে বর্তমানে যে বন্যা পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে এটা হচ্ছে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে জলাবদ্ধতা। সেনবাগ কোম্পানীগঞ্জের ওপর দিয়ে কাকড়ি নদী ও ত্রিপুরার পানি এবং নোয়াখালীর বৃষ্টির পানির সমন্বয়ে উজানের পানি মুছাপুর রেগুলেটর হয়ে নেমে যাচ্ছে। বর্তমানে মুছাপুর রেগুলেটর দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৭৫৬ ঘনমিটার পানি নামছে।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ৪০ সেন্টিমিটার পানি নেমে গেছে। কিন্তু শনিবার রাত থেকে নোয়াখালী এলাকায় আবার ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে গত ১৫ ঘণ্টায় নোয়াখালী সদরে পানির সমতল ১০ মিলিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যেভাবে পানি নামছে তাতে যদি বৃষ্টি কমে যায় তাহলে আমরা আশাবাদী শিগগিরই বন্যা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *