বুলেট হত্যা কান্ডের মূল আসামি খুনি আমিনুল খানের যত অপকর্মের ফিরিস্তি

এস,আর শরিফুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট।

আজ থেকে ১৬ বছর আগে।থাকতেন টিনের চালায়, ছিল না বাপ দাদার কোন সম্পত্তি এমনকি মাথা গোছার ঠাই। কিন্তু সেই আমিনুল খান হঠাৎ কি পেল আলাউদ্দিনের চেরাগ নাকি?? শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই আমিনুল খান গড়ে তুলেন নিজ এলাকায় মাদক ব্যবসা, এই ব্যবসা চালানোর মূল।দায়িত্ব ছিল ল্যাংড়া জাহাঙ্গীরের। মাদকের পাশাপাশি গড়ে তুলেন বিশাল ক্যাডার বাহিনী। তিনটি ইউনিয়নের মানুষকে জিম্মি করে গড়ে তুলে তার সাম্রাজ্যে। এলাকায় অনুসন্ধান করে পাওয়া যায় এই খুনি আমিনুল খানের নানা রকম নৈরাজ্য, ভূমি দখল, চাকুরী দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, সরকারি রাস্তার গাছকাটা, মামলার ভয় দেখিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সহ নানা রকম অনিয়ম। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগে সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকায় এই খুনি আমিনুল খান গড়ে তুলেন অবৈধ ভাবে দখল নেওয়া আজাদ জুটে মিলের ভিতরে অপরাধ জগতের হেডকোয়ার্টার। আজাদ জুট মিল দখলে নিয়ে রাতের আধারে চুরি করে বিক্রি করে আজাদ জুটে মিলের হ্যাচারির কোটি কোটি টাকার সম্পদ। শুধু কি তাই, আজাদ জুট মিলের ভিতরে পুকুর পাড়ে অবস্থিত কয়েক লাখ টাকার দামি দামি গাছ বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী খুনি আমিনুল খানের বিরুদ্ধে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানের আর্শীবাদ পুষ্ট এই আমিনুল খান মহেন্দ্রনগর বাফার সার গোডাউন থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। আজাদ জুট মিলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার পাট নিয়ে নিজেই করেছে রমরমা ব্যবসা,সাধারণ ব্যবসায়ীরা টাকা নিতে গেলে হয়েছে চরম হয়রানির শিকার। অনেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে গেয়েছে বলে জানা যায়। শেখ হাসিনা সরকারের শাসন আমলে নিজ ওয়ার্ড থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে এই গরু চোর আমিনুল খান। বিচারের নামে উভয় পক্ষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিত নগদ টাকা, অলংকার, এ সব দিতে না পারায় জোরপূর্বক লিখে নিত আবাদি জমি। ক্ষমতার হাত লম্বা হওয়ার এই খুনির সকল অপরাধ নিরবে সহ্য করা ছাড়া জনসাধারণের কোন উপায় ছিল না। আজাদ জুট মিলের গোপন কক্ষে তৈরি করেন টর্চার সেল। এই টর্চার সেলের অন্যতম সহযোগী ছিলে বুলেট হত্যা কান্ডের অন্যতম আসামি কালা আনেচ, সালাম সরকার, সুমন সওদাগর, একরামুল খান, আনিচুর খান, সাগর খান, পিচ্চি ক্যাডার রকি,
ক্যাডার আপেল, ক্যাডার ভুট্টু, ল্যাংড়া জাহাঙ্গীর, নিজ শ্যালক মিলন, সোহেল, বুদা বাবু, কালিয়া বাবু, ম্যানেজার হৃদয় সহ হামিদুলের ঔষধের দোকানে কাজ করা অস্ত্রধারী আমিনুল খানের অন্যতম ক্যাডার কবির সহ অনেকে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর ভর করে তিনটি ইউনিয়নে একক সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেন এই খুনি আমিনুল খান। এক সময় টিনের চালায় বাস করলেও অপরাধ জগতের গডফাদার হয়ে তৈরি করেন আজাদ জুট মিলের সামনে তার স্বর্ন কমল চোখ ঝাঝানো বিলাসবহুল কোটি টাকার রাজপ্রাসাদ। সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে নিজে হনঅটেল সম্পদের মালিক। তার এই নানান অপরাধ মূলক কাজের সহয়তা করেন বলে অনুসন্ধান করে জানা গেছে তার নিজ স্ত্রী মালা। তার এই স্ত্রীর নামে নিবন্ধনহীন গড়ে তুলেন মালা সমিতি। এখানেই চড়াসুদে ব্যবসায়ী ও গ্রামের সাধারণ মহিলা ও পুরুষের কাছে কয়েক বছরে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা
গত ১৬ বছরে প্রায় ৬০ বিঘা জমির মালিক হন এই খুনি আমিনুল খান। অভিযোগ আছে, বেড়পাংগা দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি তার নিজ ক্যাডার বুলেট হত্যা মামলার আসামি আনেচ হওয়ার অবৈধ ভাবে নিয়োগ দিয়ে দুজনে হাতিয়ে নেয় কয়েক লাখ টাকা। আওয়ামী লীগের।শান্তি সমাবেশে দুপক্ষের সংঘর্ষে শ্রমিক লীগ নেতা মাদক সম্রাট ও বুলেট হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামি ল্যাংড়া জাহাঙ্গীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজে মৃত্যু বরন করলে, তিন দিন পরে তার পরিবারকে মামলা করতে না দিয়ে নিজে বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন আমিনুল খান। এতে জেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু সহ জেলা বিএনপির মোট ৮২ জনকে আসামি করা হয়। মামলা করার পর থেকে কাল জাদুর ছোঁয়া হাতে পায় আমিনুল খান। শুরু হয় মামলা বানিজ্য। মামলার ভয় দেখিয়ে ৪ মাসে বিভিন্ন ভাবে হাতিয়ে নেয় প্রায় ৫ কোটি টাকা।
টাকা নিতে রাজি না হলে করা হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাতন ও জুলুম। লুটপাট করা হয় ব্যবসায়ীদের দোকান পাট, ঘরবাড়ি, নগদ অর্থ, গরু, ছাগল, ধান, পাট সহ অনেক কিছু। এতে নিমিষেই পথের ফকির হয়ে যায় অনেকে। নাম প্রকাশ্য করতে রাজী না হওয়ায় অনেকে বলেন, আমরা খুনি এরশাদ শিকদারকে দেখি নাই নাম শুনছি কিন্তু খুনি আমিনুল খানের সকল কাজকর্ম দেখেছি। সে মানুষ নয়, যেন মানুষরুপী জানোয়ার। অক্ষরহীন এই আমিনুল খান ক্যাডারবাহিনী দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মহেন্দ্র নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ৬/৭ জনকে উক্ত বিদ্যালয়ে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন ৪০ লাখ টাকা। কিন্তু কপালের লিখন না যায় খন্ডন, গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে লাপাত্তা হয়ে যায় আমিনুল খান।
এই খুনি আমিনুল খান বিভিন্ন কৌশলে টাকা ইনভেস্ট করে বার বার আলোচিত বুলেট হত্যা মামলার রায় পিছিয়েছে।
এবার আর হয়ত সেই সুযোগ হবে না, ইতিমধ্যে খুনি আমিনুল খানের নামে ছাত্র হত্যার দায়ে ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঢাকার লালবাগ থানায় ১ টি-, শাহবাগ থানায়১ টি, আশুলিয়া থানায় ১ টি ও– যাত্রা বাড়ী থানায় ১ টি মামলা দায়ের হয়েছে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী আমিনুল খানের বিরুদ্ধে।
এবং লালমনিরহাটে জরুরী আইনে হারাটী বিএনপি পাটি অফিস ভাংচুর এবং মহেন্দ্র নগর ইউনিয়ন পাটি অফিস ভাংচুর মামলা হয়েছে। এলাকার জনসাধারণের একটাই দাবি অতিদ্রুত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী খুনি আমিনুল খান ও তাদের দোসদের গ্রেফতার করে ফাঁসি দিতে হবে বলে এলাকার জনসাধারণ জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *