গ্রাজুয়েশন করেও নেয়া হলো না সমাবর্তন, শোকে পাগল প্রায় স্বজনরা
মশিউর রহমান রাসেল,বিশেষ প্রতিনিধিঃ-ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র সদস্য স্নাতক উত্তীর্ণ তুষার। অপেক্ষায় ছিলো সমাবর্তন অনুষ্ঠানের। সেই সাথে একটি মাল্টিমিডিয়া কোম্পানীতে ভিডিও জার্নালিস্ট হিসেবেও কর্মরত ছিলো।
বাবা-মা’র অনেক কষ্টের সোনালী ফসল ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে গ্রাজুয়েশন করিয়েছেন। রাজধানীর বেইলী রোডে অগ্নিকান্ডে তুষার নিহত হওয়ায় পুত্রহারা শোকে পাগলপ্রায় বাবা দিনেশ হাওলাদার ও মা অঞ্জনারাণি হাওলাদার। সেই সাথে আদোরের ছোট বোন অদিতিও শোকে মুহ্যমান। শোকের ছায়া বিরাজ করছে পুরো এলাকা জুড়ে।
তুষারের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের তালগাছিয়া গ্রামে।
জানাগেছে, রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রীন কজি কটেজ ৭ তলা একটি বাণিজ্যিক ভবনের কাচ্ছি ভাই রেস্টুরেন্টের অগ্নিকান্ডে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তুষার হাওলাদার (২৩) নিহত হয়। শুক্রবার (১মার্চ) দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল মর্গ থেকে তুষারের লাশ এম্বুলেন্সে বিকালে ৫টার দিকে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের তালগাছিয়া গ্রামে তুষারের পিতা দিনেশ হাওলাদার একমাত্র ছেলের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে আসতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মরদেহ এক নজর দেখার জন্য গ্রামের শত শত লোক বাড়িতে ভিড় জমায়। মা অঞ্জনা রানী হাওলাদার একমাত্র ছেলে তুষারকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ছেলেকে হারিয়ে আর্তচিৎকার আর মাটিতে লুটিয়ে পরে এ সময় এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলামোটরে অবস্থিত তার কর্মস্থল থেকে বের হয়ে বেইলি রোডে সাত তলা ওই ভবনে অবস্থিত ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সাথে খাবার খেতে গিয়েছিলেন তিনি। ঠিক আগুন লাগার কিছু আগ মুহুর্তে তারা ওই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেন। আগুন লাগলে তারা আর বের হতে পারেননি ওই ভবন থেকে। আর সেখানেই অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারান। নিহত তুষার হালদার ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের তালগাছিয়া গ্রামের দীনেশ হাওলাদারের ছেলে। তুষারের পিতা দিনেশ হালদার ঢাকা বার্ডেম হাসপাতালে চাকুরী করেন। তারা স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস করত। দিনেশের দুই সন্তানের মধ্যে তুষার বড় ও অদিতি ছোট। তুষার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক পাস করে সমাবর্তনের অপেক্ষায় ছিলো। এছাড়া তুষার হালদার স্টার টেক নামে একটি অনলাইন মাল্টিমিডিয়াতে ভিডিও জার্নালিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলো। এর আগে সে দ্যা রিপোর্ট মাল্টিমিডিয়ায় কাজ করতো।
শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন রিপন বলেন, দীনেশ হাওলাদারের একমাত্র ছেলে তুষার। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক কষ্টের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উদ্ধার করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী সেখানে গিয়েছেন যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালে রেফার করেছেন। তারপরেও আমি মনে করি এই বিল্ডিংয়ে যদি কোন অবহেলার কারণে এই দূর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
নিহত তুষারের বাবা দীনেশ হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন রাতে আমরা দুজনে কাজ শেষ করে একসঙ্গে বাসায় যাই। গতকাল রাত ৮টার দিকে আমি তুষারকে কল দিয়ে বাসায় যাওয়ার কথা বললে তখন আমাকে জানায় রাতে অফিসে খাবারের আয়োজন থাকবে। এবং আগামীকাল ১মার্চ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান আছে তাই যেতে দেরি হবে। পরে আমি বাসায় গিয়ে আবার ওরে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কল দিলে নাম্বার বন্ধ পাই৷ মনে করছি অফিসে আছে কাজ করতাছে। এরপর সকালে আমি ডিউটিতে হসপিটালে চলে আসি। ওর নাম্বারে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কল দিছিলাম তখন কল ডুকছে কিন্তু রিসিভ করে নায়। তখন আমি মনে করছি অনেক রাতে ঘুমাইছে তাই হয় তো ঘুমে আছে। সেই ঘুমই যে চিরতরের ঘুম সেটা বুজতে পারিনি বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, সকাল পৌনে ৭টার দিকে আমার নাম্বারে একজনে কল দিছে তিনি সম্ভবত একজন এসআই হবেন। আমাকে বলে আপনি কি তুষারের বাবা আপনি ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে চলে আসেন আপনার ছেলের লাশ এখানে এসে নিয়ে যান। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশ গ্রহণ করে বাড়িতে নিয়ে আসি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তুষারের লাশ দাফন করা হয়েছে।