নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান (তরফদার) শাকিলকে পুলিশ আটক করেছে। নওগাঁ সদর থানা পুলিশের সহযোগীতা নিয়ে মহাদেবপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গতকাল বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১০ টার দিকে মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ড মাছের মোড় থেকে তাকে আটক করে। মহাদেবপুর থানার ওসি হাশমত আলী বলেন, সাঈদ হাসান তরফদার শাকিলের বিরুদ্ধে অস্ত্রবাজী, দখলবাজী, টেন্ডারবাজী, দলবাজী, নাশকতা প্রভৃতি অভিযোগ রয়েছে। এব্যাপারে যৌথবাহিনী কাজ করছে।
মহাদেবপুর সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শাকিলের গ্রেপ্তারের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান চৌধুরী দুলাল কাস্টিং ভোটের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট পেলেও ইভিএম মেশিনের কারসাজিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাঈদ হাসান তরফদার শাকিলকে নির্বাচিত ঘোষণা করার পর থেকেই এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছিল। চেয়ারম্যান শাকিলের গ্রেপ্তারের খবরে তারা আনন্দ প্রকাশ করছেন। অনেকেই যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন।
গ্রেপ্তারের খবরের সাথে নানান জনে নানান মন্তব্য করছেন। অনেকেই বলছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম নির্বাচিত হবার পর তার ছেলে সাকলাইন মাহমুদ রকি ও ভাগ্নে সাঈদ হাসান তরফদার শাকিল এক ভয়াবহ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তারা এলাকায় কাজ পাওয়া সব ঠিকাদারী কাজ নিজেদের আয়ত্বে নেওয়া, সময়মত কাজ শুরু না করেও অনেক প্রকল্পের বিল তুলে নেওয়া, ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাৎ, প্রকল্পের কাজ ফেলে রাখা, সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অল্প দামে জমি, মার্কেট লিখে নেওয়া প্রভৃতি কাজে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া সেসময় নিজেরাই পটকা ফুটিয়ে বোমা বিস্ফোরণের মিথ্যা মামলা দায়ের, বিএনপি জামাত নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করে তাদের আটক করানো প্রভৃতিরও অভিযোগ উঠছে।
তাদের সিন্ডিকেটের খপ্পড়ে পড়ে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ প্রকল্প আজও চালু হয়নি, জাহাঙ্গীরপুর সরকারি কলেজের ছয়তালা ভবন নির্মাণ, মহাদেবপুর থানার চারতলা ভবন নির্মাণ, মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রভৃতির কাজ থমকে রয়েছে।
এলাকায় বালুমহাল নিয়ে বিরোধ, প্রতিপক্ষদের মারপিট, বিভিন্ন মামলায় জড়ানো, একের পর এক সাংবাদিকদের উপর হামলা করে হাত ভেঙ্গে দেওয়া, নিজেদের লোক দিয়ে সাংবাদিকদের উপর মিথ্যা মামলা করানো প্রভৃতি বিষয় নিয়ে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাদের মামা-ভাগ্নে সিন্ডিকেটে পড়ে অনেকেই নাস্তানাবুদ হয়েছেন।
আটক হওয়া চেয়ারম্যান শাকিলের অন্য সঙ্গীদেরও গ্রেপ্তার দাবি করেন স্হানীয়রা