মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে দু’হাতে ২ পিস্তল নিয়ে গুলি করা জহিরুল হক রুবেলকে (৪১) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক ফয়সল তারেক এ রায় দেন।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন প্রার্থনা করেন বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। আদালত তাকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে শুক্রবার রাতে রুবেলকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব -১০ ।
বোয়ালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, র্যাব গ্রেপ্তার করে তাকে কুমিল্লা থেকে রাজশাহীতে আনে শনিবার গভীর রাতে। রাতে সেখানেই রাখা হয়। সেখান থেকে সকালে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ গ্রহণ করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। সেখানে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
তিনি বলেন, তার নামে থানায় হত্যা, হত্যার চেষ্টা, অস্ত্র লুট ও বিস্ফোরক দমন আইনে ৬টি মামলা রয়েছে। ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে আলী রায়হান হত্যা মামলায় তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এখন থানা হেফাজতে রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
জানা গেছে, রুবেল রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামি। রুবেল রাজশাহী নগরীর চণ্ডিপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। রুবেল যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া তিনি পরপর দুইবার রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
নিজ এলাকা ছাড়াও নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় রুবেলের ছিল দুর্ধর্ষ ক্যাডার বাহিনী ও শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। এ ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে জমি দখল, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন রুবেল। হাফ ডজন মামলার আসামি হয়েও ২০২৩ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গোপন করে প্রার্থী হন তিনি। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে শক্তিশালী শ্যুটার বাহিনী গুলির্বষণ করে। এই শ্যুটার বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন রুবেল।
ওইদিন দুপুরে তালাইমারি এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা নগরীর সাহেব বাজারের দিকে এগোতে থাকে। তারা শাহ মখদুম কলেজ এলাকায় পৌঁছলে রুবেলের নেতৃত্বে শ্যুটার বাহিনী নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রুবেল মাথায় হেলমেট পরে দুটি পিস্তল দুই হাতে নিয়ে সমান তালে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করছেন। ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আলী রায়হান নিহত হন। এই দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলারও আসামি রুবেল। তবে হাসিনা পালানোর পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে রুবেলও গা ঢাকা দেন।
২০১৮ সালের এপ্রিলে রাজশাহীর নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া মহল্লা থেকে রুবেল ও তার এক সহযোগীকে পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, চার রাউন্ড গুলি ও ১২ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছিল কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ। ২০১৩ সালের মে মাসে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেন্ডারের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিহত হন মহানগরীর ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সারোয়ার হোসেন ডাবলু। ডাবলু শীর্ষ সন্ত্রাসী রুবেলের ভাই।