আদিতমারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা অনিয়ম ও দুনীর্তির অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে দায়ের করেছেন অত্র কলেজের শিক্ষার্থীরা। যার অনুলিপি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
আর অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য ইউএনও চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন বলে জানাগেছে। আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, আদিতমারী সরকারী কলেজটি গত ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট সরকারী করণ করা হয়েছে। সরকারী করণের পরপরই কলেজটির অধ্যক্ষ আজিজার রহমান অনেকটা স্বেচ্ছাচারিতার পরিবেশ তৈরি করে নানা অনিয়মের মাধ্যমে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। তিনি পদ সৃজনের জন্য শিক্ষকদের জিম্মি করে জন প্রতি এক লক্ষ থেকে পনের লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন। এতে আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন ঐ কলেজ অধ্যক্ষ। এদিকে অভিযোগ রয়েছে,যারা অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন, তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করাসহ ক্ষমতার অপব্যবহার, বেতন আটকে রাখাসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।
তিনি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হয়েও আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত। তাঁর একনায়কতন্ত্র ও নির্যাতনে তটস্থ কলেজের দায়িত্বরত অনেক শিক্ষক- কর্মচারী। শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে অনেককে। তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ বন্ধ রাখতে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে একাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজ ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল ১৩ আগষ্ট কোনো টেন্ডার ছাড়াই কলেজ মাঠের তিনটি জীবিত মেহগনি গাছ বিক্রি করেছেন অধ্যক্ষ আজিজার রহমান। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা। এরমধ্যে একটি গাছ কলেজের ছাত্ররা আটকিয়ে দেয়। এ ছাড়াও কলেজ সরকারিকরণের পর থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক বড় বড় জীবিত গাছ অবৈধভাবে কর্তৃন করেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে এসব গাছ দিয়ে রংপুর ধাপস্থ তার মালিকানাধীন দুইটি বহুতল ভবনের দরজা-জানালা, আসবাবপত্র তৈরির কাজে লাগিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে,কলেজের একাডেমিক ভবনের ২০৫ নম্বর কক্ষকে খাস কামরা হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। নিয়মিত কলেজে না আসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের তার বিরুদ্ধে। কলেজটির দর্শন বিভগের সহকারী অধ্যাপক কেরামত আলী দেখভাল করছেন।
সরকারি নিয়মনীতি না মেনে অন্যান্য সরকারী কলেজের চেয়ে বেশি করে ভর্তি ফি, ফরমপুরণ, সেশন ফিসহ অন্যান্য ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। লাইব্রেরি, সেমিনারের নামে ছাত্রদের কাছে টাকা, রোভার, বিএনসিসি, মসজিদ বাবদ বাড়তি টাকা নিলেও তা তিনি আত্মসাত করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তনকালে বিধিবহির্ভূতভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ভর্তি হতে বাধ্য করেন তিনি।
সম্প্রতি কলেজ মসজিদটি নির্মাণের কাজে হাতে দিলেও প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারির কাছে জনপ্রতি দশ হাজার থেকে চল্লিশ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। টিউশন ফি এর টাকা সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারিদের পাওয়ার কথা থাকলেও তা না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষ নিজেই আত্মসাত করে আসছেন। এছাড়াও কলেজের উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ফাঁকা ভাউচার সংগ্রহ করে নিজের খেয়ালখুশি মতো টাকা খরচ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন।এবং নিজে হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ৩৭.০২.০০০০.০৮৫.১৫.০০১.১৯.৬১ তারিখ- ০৫/০৩/২০১৯ মোতাবেক পদ সৃজনের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদনে মোঃ আজিজার রহমানের নিয়োগ বোর্ডের নম্বরপত্র জালিয়াতি ও অধ্যক্ষ হিসেবে কাম্য যোগ্যতা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও পরবর্তীতে রেজুলেশনের স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া রেজুলেশন সংযুক্ত করে পদসৃজন সম্পন্ন করেন তিনি। এছাড়াও তিনি আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দীর্ঘ দশ মাস চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আওয়ামীগের রাজনীতির সাথে কলেজ অধ্যক্ষ সরাসরি যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধ এতদিন কথা বলার সাহস পায়নি কেহও। পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ফুঁসে উঠেছেন অত্র কলেজের শিক্ষক কর্মচারী ও সাধারন ছাত্রছাত্রীরা। তারা দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দুনীর্তিবাজ এ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবী করছেন।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে কলেজটির একাধিক শিক্ষক কর্মচারী দাবী করে বলেন, আতংকের এক নাম আজিজার রহমান। তিনি আওয়ামীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত থাকায় কাউকে তোয়াক্কা করেননি। তারা আরো বলেন,তার ইচ্ছেমত চলত কলেজের কার্যক্রম। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে চরম বিপদের মুখে পরতে হত। এক কথায় একক নিয়ন্ত্রণে চলত কলেজটি।
আদিতমারী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আজিজার রহমান মোবাইল ফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, এধরনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে আলাপ চারিতার এক পর্যায়ে বলোন ,চাকুরী জীবনে শেষ বয়সে এসে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ দেখা যাক,আল্লাহ ভরসা।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নূর ই আলম সিদ্দিকী কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ৪ সদস্যের একটি তদন্ত টিমকে ৫ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট অনযায়ী পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।