রাজশাহীতে ভবন নির্মাণে অনিয়ম:মোস্তাফিজকে শোকজ নোটিশ,ভেঙে ফেলা হবে অতিরিক্ত অংশ

পাভেল ইসলাম মিমুল স্টাফ রিপোর্টার :

রাজশাহী নগরীতে আবাসন ব্যবসার নামে প্রতারণা করে কোটিপতি বনে যাওয়া সেই মোস্তাফিজকে এবার চিঠি দিয়েছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও আবাসন ব্যবসায়ী না হয়েই বিজ্ঞাপন দিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রি করার ঘটনায় দুটি পৃথক চিঠি দেওয়া হয়েছে।গত বৃহস্পতিবার এ চিঠি দুটি দেওয়া হয়েছে।পাশাপাশি সরেজমিন গিয়ে ভবন নির্মাণে অনিয়সের প্রমাণ পেয়েছে আডিএ।নকশার বাইর অবশিষ্ট অংশ ভেঙে ফেলতে এরই মেধ্যে চিঠি দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।ভবন পরিদর্শণ করে ফ্ল্যাটের অংশেরও পরিমাপ করেছে আরডিএ।

ওই ভবনের পাশের এক বাসিন্দা আনসার আলী বলেন, ভবনটি নির্মাণের সময় নানা অনিয়ম দেখে আমরা বার বার আরডিএতে ফোন করে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। চারিদিকে এক ফিটও জায়গা ছাড়েনি আবাসন ব্যবসায়ীরা। অবৈধভাবে প্রতিটি ফ্ল্যাটের অতিরিক্ত অংশ বৃদ্ধি করে বাণিজ্য করেছে তারা।

আরেক জমির মালিক বলেন,চুক্তি অনুযায়ী মোস্তাফিজ অনেক শর্তই মানেনি। সে প্রতারণা করেছে আমাদের সঙ্গেও। সময়মতো বাড়ির কাজও শেষ করেনি। এখন এসব নিয়ে কথা বললে সে বাকি কাজগুলো শেষ করবে না বলে হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু তার অংশ সে ঠিকই বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আমরা ওয়ারিশরা পড়েছি বেকায়দায়।

একইভাবে অনিয়ম করে আরেকটি ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে নগরীর ওই বরেন্দ্র এলাকার পেছনে।এখানে গ্রীণ মনোনয়ারা প্যালেস নামের ৬ তলা ভবনটির প্রতিটি ফ্ল্যাট বিক্রি করা হচ্ছে ১৩৫০ ও ১৪৫০ স্কয়ার ফিট হিসেবে। এখানেও প্রতিটি ইউনিটে ১০০-১৫০ স্কয়ার ফিট অতিরিক্ত করা হয়েছে অনুমোদিত নকশার বাইরে।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্র মতে,গ্রীণ প্যালেসের নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে আব্দুল ওয়াহাবসহ সাতজন ব্যক্তির নামে। তাঁরাই মূল জমির মালিক। ওই ভবনের নকশা অনুমোদন আছে প্রতিটি ফ্লোরে (তলায়) ৩০৭৭ স্কয়ার ফিট করে। কিন্তু বাস্তবে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার স্কয়ার ফিট করে। অন্যদিকে একই প্রতিষ্ঠানের করা গ্রীণ মনোনয়ারা প্যালেস নামের ভবনটির প্রতিটি ফ্লোর অনুমোদন রয়েছে ৩২২৬ স্কয়ার ফিট করে। এটির নকশা অনুমোদন আছে সওকত ওসমান ও ইকবাল হাসানসহ ৭ জনের নামে। তাঁরাই জমির মূল মালিক। এই ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে চারটি করে ইউনিট রয়েছে। যার গড় অন্তত ৫ হাজার ২০০ স্কয়ার ফিট করে রয়েছে। বিপুল পরিমাণ অংশ অতিরিক্ত করা হয়েছে নকশার বাইরে গিয়ে।গ্রীণ প্লাজা রিয়েল এ্যাস্টেটের কোনো নিবন্ধন না থাকায় ভবন নির্মাণের নকশার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে জমির মালিকের নামে। সেই হিসেবে ওই ভবন দুটির ফ্ল্যাট কোনো মতেই আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে বিক্রি করতে পারেন না মোস্তাফিজ। কিন্তু সেটিও করেছেন,পাশাপাশি অনিয়ম করে নকশার বাইরে ইচ্ছামত অতিরিক্ত অংশ বৃদ্ধি করেছেন। অতিরিক্ত ওই অংশগুলো ভেঙে ফেলা হবে বলেও জানিয়েছে আরডিএর সূত্রটি। এর জন্য এরই মধ্যে ভবনটি সরেজমিন পরিদর্শন করে পরিমাপ নির্ধারণ করেছে আরডিএ’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

জানতে চাইলে গ্রীণ প্লাজা রিয়েল এ্যাস্টেট’প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং ম্যানেজার মাসুদ রানা বলেন,গ্রীণ মনোয়ারা প্যালেসে এখন ফ্ল্যাট আছে বিক্রির মতো। প্রতিটি ফ্লোরে চারটি ইউনিট আছে। অতিরিক্ত অংশ করা হয়েছে কিনা কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথোরাইজড কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন,গ্রীণ প্যালেস ও গ্রীণ মনোয়ারা প্যালেসে নকশার বাইরে অতিরিক্ত অংশ করা হয়েছে। আমরা অতিরিক্ত অংশ ভেঙে ফেলার জন্য চিঠি দিবো। প্রাথমিকভাবে তাদের কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছি। অতিরিক্ত অংশ ভেঙে ফেলা হবে। আমরা দুটি চিঠি দিয়েছি। এর মধ্যে একটি দিয়েছি ওই ভবন দুটির জমির মালিকদেরকে। নকশার বাইরে অতিরিক্ত অংশ করায় সেটির জবাব চাওয়া হয়েছে। আরেকটি দিয়েছি আবাসন ব্যবসায়ী না হয়েই বিজ্ঞাপন দিয়ে ফ্ল্যাট ব্যবসার নামে প্রতারণা করায় মোস্তাফিজকে। দুটি চিঠিতেই কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গ্রীণ প্লাজা রিয়েল এ্যাস্টেট’র এই আবাসন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *