রমজানে করনীয় ও বর্জনীয়

মুহাম্মদ রাসেদ বিল্লাহ চিশতীঃ

বছর ঘুরে মুসলিম উম্মাহের মাঝে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত নিয়ে আবার ফিরে এসেছে পবিত্র রমজান মাস। এই রমজান মাসে আল্লাহপাকের সমস্ত রহমতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়। বরকত মণ্ডিত এই মাসে মুসলিম সমাজে রোজা পালন ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে যাবতীয় গর্হিত মন্দ, পাপ ও কুরআন হাদিসে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা, সৎ ও পূর্নময় কাজের চর্চা করে নফসের শুদ্ধতা অর্জনের এক নেয়ামতের মাস পবিত্র রমজান মাস। মুসলিম সম্প্রদায়ের ২য় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সিয়াস সাধনার মাস পবিত্র রমজান। দীর্ঘ ১১ মাস পর আসে ইসলামের নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে জড়িত এই মাহে-রমজান। মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ পাক মুসলিম মুমিন বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পার’ (সুরা আল বাকারা-১৮৩)। অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের ইবাদত বন্দেগি ও নেয়ামত সমূহ সত্তর শতাংশ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়েছে। এই পবিত্র মাসে রহমতের ৩৬০টি দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়ে থাকে। শয়তান ও তার ক্বাওম এই মাসে তাদের কোন কার্যক্রম চালাতে পারে না। তারা গুষ্টিসহ আল্লাহপাকের বেরিয়া দ্বারা বাঁধা থাকে। অন্যান্য রহমতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত হল এই রমজান মাসে পবিত্র কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ হয়েছে। এই পবিত্র মাসে পবিত্র লাইলাতুলকদর যাহা হাজার রজনী অপেক্ষাও উত্তম এক রজনী প্রবর্তিত হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর বাৎসরিক ধন সম্পদ অনুপাতে এই মাসেই গরিবের মাঝে যাকাত প্রদান ফরজ করা হয়েছে। *বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এই রমাজন মাসে। * হযরত ইব্রাহীম(আ:) এর সহিফা নাযিল হয়েছিল তাৎকালীন রমজানের ১ম দিবসে, *তাওরাত নাযিল হয়েছিল এই রমাজনে। *যাবুর ও ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছিল এই পবিত্র রমজান মাসে। এ মাসের নাম পবিত্র কোরআন মাজিদে উল্লেখ করা হয়েছে, মহান আল্লাহ এ মাসে রোজা ফরজ করেছেন,আবার এ মাসেই পবিত্র কোরআনুল কারিম নাজিল করা হয়েছে। এ মাসের ইবাদত বন্দেগির ব্যাপারে প্রিয় রাসূলে পাক (সাঃ) সাহাবাদেরকে সুসংবাদ দিতেন। রজব ও শাবান মাস জুড়ে রমজানের ইবাদত-বন্দেগির জন্য নিজেকে তৈরি করতেন, দোয়া পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে দোয়া করতে বলতেন, রমজানের রাত ও দিনে মুসলমানদের দোয়া অনবরত আল্লাহর দরবারে কবুল করা হয়, এ মাসের প্রতি রাতে ক্ষমা লাভে ফেরেশতারা মানুষকে আহ্বান করতে থাকে। রমজান মাসে ওমরাহ আদায় আল্লাহর রাসূল (সা.) সঙ্গে হজ্ব পালনের সাওয়াব পাওয়া যায়। বার মাসে নিজ নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পবিত্র রমজান মাস দিয়েই শুরু করা হয়ে থাকে। তাই এই মাসকে আত্নসুদ্ধির মাসও বলা হয়ে থাকে।
বৈশ্বিক মহামারী সংক্রান্ত পরিস্থিতিতে এখন সারা বিশ্বব্যাপী একটা নীরব যুদ্ধ চলছে। এরকম একটা বিপর্যস্ত সময়ে আমরা মুসলমানরা ৩য় বারের মতো পবিত্র মাহে রমজানের সম্মুখীন হয়েছি। ২০২০ইং সালে করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে ৪ মাসের মাথায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান শুরু হয়। কোভিড ১৯এ আতংকিত গ্রামের জনপদে ঘরবন্দী কর্মহীন জনসাধারণের চরম খাদ্য সংকটে হাহাকার দেখা দিয়েছিলো। অন্য যেকোনো বছরে পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপি মুসলিম উম্মাহ চরম আনন্দময় উল্যাসে মেতে থাকলেও গত দু রমজানে করোনা মহামারী প্রারম্ভিক সময়ে করোনার আতংকে ভাটি পড়ে রমজানের আনন্দে। সংকটকালীন মুহূর্তে দান সাহায্য নীরবে এবং গোপনে দূরত্ব বজায় রেখে করতে হবে। আল্লাহ গোপনে দানকে বেশি পছন্দ করেন।
অসহায় দুস্ত মানুষের মুখে আহার তুলে দেওয়ার মত সোওয়াব আর অন্য কিছুতে হতে পারে না। এর মাঝে চরম আনন্দও রয়েছে। আমাদের একটু দান অন্যের মুখে হাসি ফুটাতে পারে। এই দান যেন মানুষের মানবিক মূল্যবোধে আঘাত না হানে। সে দিকে নজর রাখতে হবে। এই দানকৃত খাবার খেয়ে কোন মানুষ রোজা রাখালে তা প্রভুর কাছে অল্পতেই গৃহীত হবে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো তবে তা কতই না উত্তম, আর যদি গোপনে করো এবং অভাবীকে দাও, তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম’ (সুরা বাকারা: ২৭১)
প্রিয় নবী (দঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের সম পরিমাণ সওয়াব পাবে; রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না। (সুনানে তিরমিযি) বড় পির আবদুল কাদের জিলানী বলেন, মানুষকে খাওয়ানো মাঝে যে সওয়াব ও মর্তবা রয়েছে যদি এই পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ আমার থাকতো আমি মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতাম। রমজান মাসের রোজা বান্দার জন্য আল্লাহর একান্ত মহা অনুগ্রহ। অন্য সব রোজা থেকে আল্লাহর ফরজ করা নির্ধারিত রোজার মর্যাদা অনেক বেশি। পবিত্র রমজান মাস মহান আল্লাহর সঙ্গে প্রিয় বান্দার প্রেম বিনিময়ের সবচেয়ে উত্তম মাস। এ মাসের ফজিলত ও মর্যাদা রয়েছে আরো বহুগুণ। এটা ধৈর্য্যে, ত্যাগ, তিতিক্ষা, পরিক্ষা, সহানুভূতি প্রদর্শন ও মহান প্রভুকে রাজি খুশি করানোর মাস। সংক্রমণ রোদে মসজিদের ওযুখানায় সাবান,হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়মিত রাখতে হবে। প্রত্যেক নামাজ আদায় শেষে অবশ্যই ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য মহান স্রষ্টার দরবারে খতিব ও ইমামগণ দোয়া করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *